সাইপ্রাসের লারনাকা শহরের চারতলা ইহুদি কমিউনিটি সেন্টারটি সাধারণত বেশ নিরিবিলি থাকে। সেখানে ইহুদি দর্শনাথীরা যান মূলত প্রার্থনা করতে। তাঁদের অনেকেই কমিউনিটি সেন্টারটির খাবারের স্বাদ নিতে ভোলেন না। দর্শনার্থীদের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো সাইপ্রাসে একসময় যুক্তরাজ্য পরিচালিত বন্দিশিবিরগুলো সম্পর্কে জানা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসিদের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া ৫৩ হাজারের বেশি ইহুদিকে ওই বন্দিশিবিরগুলোতে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। তাঁরা সেখানে ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৪৯ সালে এই ইহুদিদের শেষ ১০ হাজার জন নতুন গঠন করা রাষ্ট্র ইসরায়েলে পাড়ি জমান।
লারনাকা শহরের কমিউনিটি সেন্টারটির চিত্র এখন ভিন্ন। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর ইসরায়েল ছেড়ে বহু ইহুদি ওই কমিউনিটি সেন্টারটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে সেখানে দেখা দিয়েছে সংকটময় এক পরিস্থিতি। আশ্রয় নেওয়া ওই ইহুদিদের লক্ষ্য একটাই—একটু শান্তিতে থাকা।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ২৪০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করেন হামাস সদস্যরা। লারনাকা শহরে ইহুদিদের প্রধান ধর্মীয় নেতা অ্যারি রাসকিন বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ইহুদি এই শহরে আসছেন। হামাসের হামলার পর শান্তির খোঁজে সাইপ্রাসে এসেছেন ১৬ হাজারের বেশি ইসরায়েলি।’
অ্যারি রাসকিন জানান, কমিউনিটি সেন্টারটিতে সন্তানদের নিয়ে একাকী মা, হামাসের হামলায় আতঙ্কিত শিশু, এমনকি প্রতিদিন মাথার ওপর দিয়ে ধেয়ে চলা রকেটের শব্দ যাঁরা সহ্য করতে পারছেন না—এমন সব মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের বিছানা, খাবার, অস্থায়ী থাকার জায়গা—সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের নাগরিক ইসরায়েল পেরেজ বলেন, ‘সব ঝঞ্ঝাট, রকেট হামলা, সংঘাত থেকে আমরা দূরে থাকতে চাইছিলাম। তাই দেশ থেকে এসে আমরা কয়েক বন্ধু সাইপ্রাসের আইয়া নাপা শহরে পাঁচ দিন কাটিয়েছি। এখানে নিজেদের নিরাপদ মনে হয়।’
এদিকে হামাসের হামলার দিন থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহত বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উপত্যকাটিতে ১১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এর জবাবে ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কায়ও অনেক ইহুদি সাইপ্রাসে চলে যাচ্ছেন।