রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বড় আকারের একটি যাত্রীবাহী বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সফলভাবে শেষ করেছে। উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে রাশিয়া মূলত পশ্চিমা দেশগুলোয় তৈরি বিমানের ওপর নির্ভরশীল। তবে নতুন এই বিমান বানিয়ে তারা সেই নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট করপোরেশন বলেছে, দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে সক্ষম যে ইল–৯৬–৪০০ এম উড়োজাহাজ, তার একটি প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে, যেটি প্রথমবারের মতো আকাশে উড়েছে। বিমানটি ২৬ মিনিট আকাশে ছিল। এ সময় এটি ২ হাজার মিটার বা ৬ হাজার ৫৬২ ফুট ওপরে ওঠে। আর এর গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার। গত সপ্তাহে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানিটি এ কথা জানিয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়ায় সুপরিচিত টুপোলেভ, ইলুউশিন ও সুখোই বিমানগুলো ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট করপোরেশনের আওতাধীন। কোম্পানিটি জানিয়েছে, নতুন বিমানটি ৩৭০ যাত্রী বহনে সক্ষম। এয়ারবাসের এ৩৪০ কিংবা বোয়িংয়ের ৭৭৭ মডেলের বিমানগুলোও কাছাকাছিসংখ্যক যাত্রী বহন করতে পারে।
রাশিয়ার ইল–৯৬–৩০০ মডেলের বিমানের চেয়ে নতুন বিমানটি অনেক উন্নত। পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি বিমানের সঙ্গে ইল-৯৬-৩০০ মডেলের বিমান পাল্লা দিতে পারছে না, এ কারণে প্রায় এক দশক আগে এই বিমান নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে এর আগে খবরে বলা হয়েছিল।
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ বলেন, ইল–৯৬–৪০০ এম মডেলের উন্নত ও আধুনিক সংস্করণের বিমানের প্রথম ও সফল উড্ডয়ন এটাই দেখাচ্ছে যে স্থানীয়ভাবে বিমান তৈরির সক্ষমতা কতটা বেড়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট করপোরেশন বলেছে, ইল–৯৬–৪০০ এম মডেলের বিমানটি যাত্রী বহনে তিন ধরনের ব্যবস্থা রাখতে পারবে। একটি আধুনিক তথ্য–বিনোদনব্যবস্থাসহ; এতে ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া এই বিমানে থাকবে একটি ‘আধুনিক’ রান্নাঘরও।
ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল খাত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। তবে নতুন বিমানের উড়ানকে রাশিয়ার জন্য একটি জনসংযোগ বিজয় হিসেবে দেখা যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াকে কেউ উড়োজাহাজ লিজ দিতে পারে না। ফলে দেশটি বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রায় ১০ শতাংশ সক্ষমতা হারিয়েছে। এরপর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন একটি আইন করেছেন, যার আওতায় রাশিয়ার বিমান কোম্পানিগুলো লিজ নেওয়া বিমান জব্দ করে নিজ দেশে সেগুলো পুনর্নিবন্ধন করতে পারে।
কিন্তু রাশিয়া বোয়িং, এয়ারবাসসহ বমবার্ডিয়ের ও এমব্রায়েরের মতো বিমান নির্মাতাদের কাছ থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ পেতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে তাদের বিমানগুলো কার্যকর রাখাই এখন রাশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিমান চলাচলসম্পর্কিত বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিরিয়ামের তথ্যানুসারে, ২০২২ সাল পর্যন্ত সে দেশে মাত্র ১৪৪টি বিমান কার্যকর ছিল, যেগুলো রাশিয়ার তৈরি।
ফ্লাইটগ্লোবালের স্ট্র্যাটেজিক কনটেন্ট বিভাগের প্রধান মুরডো মরিসন সিএনএনকে বলেন, মস্কো এটা স্বীকার করবে না, তবে ইউক্রেনে হামলার পর যেসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা সত্যিকার অর্থেই রাশিয়ার বিমান চলাচল খাতের ক্ষতি করেছে।